Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪,

‘পুলিশে নিয়োগে ঘুষ-দুর্নীতির বদনাম এখন নেই’

নিজস্ব প্রতিবেদক

সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৯, ০৭:৫৬ এএম


‘পুলিশে নিয়োগে ঘুষ-দুর্নীতির বদনাম এখন নেই’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একসময় পুলিশে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে ঘুষ-দুর্নীতির বদনাম ছিল। ‍এখন নেই। ‍পুলিশ নিয়োগ পরীক্ষা ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত করে পুলিশ বাহিনী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পুলিশ ট্রাস্টের ‘কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন- অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত স্বচ্ছতার পরিচয় দিয়েছে। খুবই স্বচ্ছতা ও দক্ষতার সাথে পুলিশের নিয়োগ হয়েছে। এতে অনেক দরিদ্র ছেলে-মেয়ে কোন রকম দুর্নীতি ছাড়া চাকরি পাওয়া পুলিশ বাহিনীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। ট্রেনিং দক্ষতা বাড়ায়, ট্রেনিং এর উপর গুরুত্ব বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, ঘুষ-দুর্নীতিমুক্তভাবে যেভাবে এবার নিয়োগ হয়েছে, অতি সাধারণ দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েরাও পুলিশে চাকরি পেয়েছে। প্রতিটি জেলায়-উপজেলায় এ নিয়োগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা অত্যন্ত সততা ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছে। তারা বিশেষ দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছে। এটা সকলকেই অনুসরণ করতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষগুলো চাকরির সুযোগ পায়।

পুলিশকে দেয়া সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে পুলিশের ওপর মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে কনস্টেবল থেকে এসআই পর্যন্ত ঝুঁকি ভাতা চালু করেছি। দেশের ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ’ কাজগুলো পুলিশকে করতে হয়। তাই পুলিশের জন্য যেখানে যতটুকু কাজ করা দরকার আমরা করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, তাদের (পুলিশ) জন্য গাড়ি, মোটরসাইকেল, এমনকি চাকরিতে পদোন্নতির ব্যবস্থা করে দিয়েছি। পাশাপাশি সার্বিকভাবে সকলের বেতন আমরা বৃদ্ধি করেছি। একসঙ্গে একবারে এত বেতন বৃদ্ধি পৃথিবীর কোথাও নেই, আমরা পুলিশ বাহিনীর জন্য সেটা করে দেখিয়েছি।

থানার সংস্কারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশকে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। মানুষ পুলিশ থেকে যেমন সেবা পাবে, একইভাবে সেবা পাওয়ার স্থানটা দেখার একটা ব্যাপার আছে। আমি মনে করি, প্রত্যেকটি থানা অন্তত দর্শনীয় হতে হবে, সুন্দর হতে হবে। আপনারা খুঁজে খুঁজে দেখেন কোথায় কোথায় আপনাদের থানাগুলোর দুরবস্থা আছে। আমার কাছে প্রজেক্ট নিয়ে আসেন। আমরা সেটাকে পাস করে আরও উন্নত করে দেব।

পুলিশের অবদানের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই। তারা আমাদের দেশ থেকে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসকে দূর করে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্যান্য সংস্থাও অত্যন্ত দক্ষতার ভূমিকা রেখেছে। দেশে নানা ধরনের অনুষ্ঠান হয়, প্রতিটা ধর্মের ধর্মীয় অনুষ্ঠান, পহেলা বৈশাখসহ প্রতিটি অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সাথে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুষ্ঠুভাবে প্রতিটা অনুষ্ঠান যাতে করা যায় সেই ব্যবস্থা করে পুলিশ। ঈদের আনন্দে সকলে যখন আনন্দিত, আমার পুলিশ বাহিনী তখন তাদের পরিবার-পরিজন ছেড়ে কর্তব্য পালন করে। জাতির জন্য তাদের এ ত্যাগ আমরা সবসময় স্বীকৃতি দেব এবং তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আমরা তাদের সব চাহিদা পূরণ করছি। তাদের চাহিদামত কমিউনিটি ব্যাংক উদ্বোধন করা হলো।

তিনি বলেন, আগে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালনের সময় নিহত হলে সামান্য কিছু টাকা সাহায্য দেয়া হতো। তাদের সাহায্য বৃদ্ধির জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে কল্যাণ ট্রাস্টের প্রস্তাব এসেছিল। আমরা ট্রাস্ট করে দিয়েছি। ট্রাস্টে উপার্জনের জন্য কী প্রয়োজনীয় সেই বিষয়ে কিছু সুবিধা আমি করে দিয়েছিলাম। আমরা সশস্ত্র বাহিনীর জন্য ব্যাংক দিয়েছি, বিজিবি জন্য দিয়েছি। পুলিশ বাহিনী বাকি ছিল তাদেরও ব্যাংক করে দিলাম।

তিনি আরও বলেন, আমরা বেসরকারি খাতেও ব্যাংক দিয়েছি। ব্যাংকিং সেবাটা এখন উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এ ব্যাপারটা যেন সব মানুষ নিতে অভ্যস্ত হয় -এ জন্য আমরা কৃষকদের ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় চেষ্টা করি আমাদের পুলিশবাহিনী আরও দক্ষ হয়ে গড়ে উঠুক। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় থাকাকালে আমি স্টাফ কলেজ প্রতিষ্ঠা করে দেই। চিকিৎসার জন্য রাজারবাগে হাসপাতাল নির্মাণ করে দিয়েছি। শতভাগ রেশনের ব্যবস্থাও আমরা করেছি। ’

প্রধানমন্ত্রী পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘পুলিশ দেশে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ দমনে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। পাশাপাশি আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্যান্য সংস্থাগুলোও বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে এবং তারা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবী যতটা এগিয়ে যাচ্ছে, অপরাধ প্রবণতার ধরণও ততটা পাল্টাচ্ছে। সাইবার ক্রাইম থেকে শুরু করে নানা ধরনের ক্রাইম এখন হচ্ছে। এর সঙ্গে তাল মেলানোর জন্য পুলিশের দক্ষতা অর্জনে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি এবং আধুনিক প্রযুক্তির শিক্ষার ব্যবস্থা করছি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ শুধু বাংলাদেশ না, বিশ্বব্যাপী এটা একটা বড় সমস্যা। কিন্তু আমি এইটুকু বলব, আমাদের দেশে পরপর কয়েকটি ঘটনা ঘটল। হলি আর্টিজন বা শোলাকিয়ার ঘটনায় সবার আগেই কিন্তু পুলিশই ছুটে গেছে এবং জীবনও দিয়েছে। এছাড়া আন্দোলনের নামে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি পুলিশের ওপরও আক্রমণ হয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী। আমরা সেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের যে অগ্রযাত্রা তা অব্যাহত রাখতে হবে। বাংলাদেশকে আর পেছনে তাকাতে হবে না। অর্থনীতি উন্নত রাখতে হলে দেশের শান্তি শৃংখলা বজায় রাখাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আর দেশের শান্তি শৃংখলা ঠিক রাখতে পুলিশের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। এই কাজটা পুলিশকে দক্ষতার সাথে করতে হবে। আমি কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করছি। সেই সাথে আমি আশা করবো এখানে অনেক নতুন কর্মসংস্থান হবে এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা তাদের যেকোন বিপদে এই ব্যাংক থেকে সহযোগিতা পাবে।

এর আগে,সকাল ১০টার দিকে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সির মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের শুভ উদ্বোধন করেন। এসময় ভিডিও কনফারেন্সির অপর প্রান্তে যুক্ত থাকে রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়াম ও গুলশান কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এর কর্পোরেট অফিস।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে পুলিশ সপ্তাহে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য একটি নিজস্ব ব্যাংকের প্রস্তাব করলে প্রধানমন্ত্রী তাতে সম্মতি জ্ঞাপন করেন। এরপর পুলিশ সদস্যদের স্বেচ্ছায় প্রদত্ত চাঁদার মাধ্যমে ৪ শত কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করা হয়।

মূলধন সংগ্রহের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট লাইসেন্সের জন্য আবেদন করলে ১ নভেম্বর ২০১৮ সালে কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড নামে লাইসেন্স প্রদান করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বর্তমানে কমিউনিটি ব্যাংক ৬ টি শাখা (ঢাকা- গুলশান ও মতিঝিল, চট্টগ্রাম- আগ্রাবাদ, গাজীপুর- শ্রীপুর মাওনা, নারায়নগঞ্জ- পঞ্চবটি ও হবিগঞ্জ- নোয়াপাড়া) নিয়ে যাত্রা শুরু করছে।

অত্যাধুনিক কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার ফিন্যাকল (Edgreverve Infosys) ব্যবহার করে গ্রাহকের একাউন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। গুলশান- ১ এর রোড নং-১৪৪, প্লট-২ পুলিশ প্লাজা, কনকর্ড টাওয়ার-২ লেভেল-১০ থেকে কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড হেড অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

এমএআই