ডেঙ্গু নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের বক্তব্যে হাইকোর্টের বিস্ময়
‘ডেঙ্গুতে ২২ জন মারা গেল তবুও মেয়র বলেন কিছুই হয়নি’

ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস ইজিপ্টিসহ মশা নিয়ন্ত্রণ বা নিধনে অকার্যকর ওষুধ আমদানি, সরবরাহ ও কেনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
দ্রুত কার্যকর ওষুধ আমদানি করে তা ছিটানোর ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
আগামী ২০ অগাস্ট এই আদেশর অগ্রগতি প্রতিবেদন দুই সিটি করপোরেশনকে আদালতে উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি করপোরেশন কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে এবং সেসব পদক্ষেপের কার্যকারিতা কী সে সংক্রান্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি করে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার (১৭ জুলাই) এ আদেশ দেয়।
আদালতে দুই সিটি করপোরেশনের প্রতিবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী নুরুন্নাহার নূপূর। রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
শুনানিতে সিটি করপোরেশনের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বিচারকরা বলেন, ডেঙ্গু মহামারি হতে আর বাকি নাই। মশার জন্য আমরা পদক্ষেপ নিতে বলেছিলাম, নেননি। আমরা কথা বললে তো বলেন বড় বড় কথা বলছি। ডেঙ্গুতে ২১-২২ জন মানুষ মারা গেছেন, তারপরেও সিটি করপোরেশন বলছে ‘কিছু না’। মেয়র বলেন ‘কিছুই হয়নি’।
২১-২২ জন মানুষ মারা গেছেন, কয়েক হাজার মানুষ অসুস্থ, আচরণ চেঞ্জ করেন। ফেব্রুয়ারি থেকে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলাম। তখন থেকে ব্যবস্থা নিলে আজ এমনটা হত না। যার সন্তান মারা গেছে সেই বোঝে কষ্টটা কী। ছোটো ছোটো বাচ্চারা আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিদিন খবরে দেখছি, মানুষ মারা যাচ্ছে।
এ সময় সিটি করপোরেশনের আইনজীবী নুরুন্নাহার নূপূর বলেন, এগুলো দেখলে-পড়লে খারাপ লাগে। তখন বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারক কে এম কামরুল কাদের বলেন, দুর্নীতিবাজদের খারাপ লাগে না। কারণ তারা বাড়িঘর দেশের বাইরে করে। তাদের ছেলে-মেয়েরা দেশের বইরে থাকে, ওইখানে পড়ালেখা করে। জরুরি ব্যবস্থা করেন। মশা মারার ওষুধে যদি কাজ না হয় তার মানে অকার্যকর ওষুধ কেনা হয়েছে। ওখানে দুর্নীতি হয়েছে! দুর্নীতি হয়ে থাকলে কারা কারা এর জন্য দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন।
ঢাকায় ব্যাপকভাবে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার সম্প্রতি সচিবালয়ে এ-সংক্রান্ত এক সভায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম মশার ওষুধ সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করার কথা জানান। লিমিট অ্যাগ্রো প্রোডাক্টস নামের ওই কোম্পানির ওষুধ তিনবার ছিটিয়েও মশা নিধনে কাঙ্খিত ফল পাওয়া যায়নি বলে উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান ভাণ্ডার রক্ষক ও ক্রয় কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন জানিয়েছেন।
তিনি বলেছিলেন, ওষুধে কমপক্ষে ৮০ ভাগ মশা মরলে সেটাকে কার্যকর বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু তিনবারই তাদের দেওয়া ওষুধে কাঙিক্ষত পরিমাণ মশা মরেনি। একবার মরেছে ২ ভাগ, আরেকবার ১৮ ভাগ, তৃতীয় দফায় ৫০ ভাগ।
এই প্রতিষ্ঠান থেকে কত দিন ধরে ওষুধ নেওয়া হচ্ছে সে তথ্য স্পষ্ট করে দিতে পারেননি এই কর্মকর্তা। তবে বেশিরভাগ সময় এই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেই ওষুধ কেনা হত বলে জানান তিনি।
ডিএনসিসি থেকে জানা যায়, গত ১১ বছর ধরে মশা নিধনে লিমিট অ্যাগ্রো প্রোডাক্টস ও নোকন লিমিটেড নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান থেকে থেকে একটি নির্দিষ্ট মিশ্রণের ওষুধ সংগ্রহ করা হয়ে আসছে।
আদালতে শুনানিতে জ্যেষ্ঠ বিচারক এফ আর এম নাজমুল আহাসান বলেন, এই সিজন (ডেঙ্গুর মওসুম) চলবে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ফেব্রুয়ারিতে যখন বলেছিলাম তখন যদি ব্যবস্থা নেওয় হত তাহলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হত না।
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে গত ২ জুলাইও উষ্মা প্রকাশ করে হাইকোর্ট। সেদিন আদালত বলে, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব অনেক বেড়ে গেছে। এমনকি অর্থমন্ত্রীও ডেঙ্গুর কারণে বাজেট উপস্থাপন করতে পারেননি। এ ছাড়া আরও অনেক মন্ত্রী-এমপি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। বিচার বিভাগেরও অনেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত। শত শত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এটা তো মহামারি আকার ধারণ করছে!
পরে আদালত ঢাকায় ডেঙ্গুসহ মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দুই সিটি করপোরেশনকে নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি করপোরেশন কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সেসব পদক্ষেপের কার্যকারিতা কী, সে বিষয়ে সিটি করপোরেশনের দুই মেয়র ও দুই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে বাস্তবায়ন প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়। সেই প্রতিবেদন এদিন আদালতে হাজির করা হয়।
এর আগে গত ১৫ মে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশেনের দুই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা করে মশা নিয়ন্ত্রণে সতর্ক করেছিল হাই কোর্ট।
অপর একটি বিষয় নিয়ে তলবে হাজির হলে দুই সিটি করপোরেশনের দুই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে সেদিন আদালত বলেন, এখনই পদক্ষেপ না নিলে বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব আরও বাড়তে পারে।
বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান সেদিন দুই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, শোনেন আরেকটা বিষয়, যদিও রুলের টার্মে এটা নেই, তারপরও বলছি পাবলিক ইন্টারেস্টের বিষয়। এই যে বর্ষার সিজন আসছে, আপনারা যদি এখনই স্টেপ না নেন তাহলে কিন্তু ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ায় মানুষ আক্রান্ত হবে।
আরআর
- বুদ্ধিজীবী দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা
- বেকারদের কর্মসংস্থানের আশ্বাস কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন হোক
- শাক বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন অন্ধ সন্তোষ কুমার
- কাঁচাবাজারে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে
- ছুটির দিন জমেছে ইসলামি বইমেলা
- পাবলিকে বন্ধ হলে লাভবান হবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়
- মারুফ-তানহার দখল’র মহরত অনুষ্ঠিত
- সংকট রেখেই রেলের উন্নয়ন
- সূর্যসন্তানদের হারানোর ৪৮ বছর আজ
- রাজ্যে রাজ্যে বিক্ষোভে অশান্ত ভারত
- সাড়ে ৫ বছর ধরে মর্গে খোকনের লাশ
- ব্রেস্ট ক্যান্সার চিকিৎসায় হোমিও প্রতিবিধান
- বিচারপতি বললেন রিপোর্ট ভালো, আবেদীনের না
- মহান বিজয় দিবসে ১৬ টাকায় মোবাইল ফোন!
- খালেদা জিয়ার মুক্তি: কাফনের কাপড়ে রাস্তায় বিএনপি
- ভৈরবে লাখ টাকায় ছাড়া পেলেন দুই মাদক কারবারি
- সুপ্রিম কোর্টের সামনে ৩ মোটরসাইকেলে আগুন
- কেরানীগঞ্জে ভয়াবহ আগুনে নিহত ১, দগ্ধ ২৫ (ভিডিও)
- দিনে বিয়ে রাতে তালাক অভিনেত্রী তানিয়ার!
- ভুলেও কলব্যাক করবেন না যেসব নম্বরে
- সিলগালা রিপোর্টে খালেদার ভাগ্য!
- খালেদার মুক্তির আরেকটি উপায় আছে, জানালেন কামরুল
- পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর স্থগিত
- খালেদার জামিন আবেদনের শুনানি শুরু