Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২০ মে, ২০২৪,

বিদেশফেরতদের ঘোরাঘুরি কোয়ারেন্টাইনই করোনা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

মার্চ ১৮, ২০২০, ০৫:০২ এএম


বিদেশফেরতদের ঘোরাঘুরি কোয়ারেন্টাইনই করোনা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

নভেল করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি বাংলাদেশে নয়। চীন থেকে শুরু হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছাড়িয়ে এটি বাংলাদেশে এসেছে। আর বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যাদের করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে তাদের কেউই বিদেশি নয়, প্রবাসী বাংলাদেশি।

অর্থাৎ আক্রান্ত অন্য দেশ থেকে তারা করোনার জীবাণু সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। গত কয়েকদিন ধরে সংবাদ মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে বিদেশ ফেরতদের ঔদ্ধত্যের খরব। তারা সতর্কতা মানছেন না।

বিদেশ থেকে ফেরার পরে ১৪ দিনের যে কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা, তারা তা থাকছেন না। এতে তাদের পরিবার-পরিজন যেমন ঝুঁকিতে রয়েছেন তেমনি সারাদেশ হুমকির মুখে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত দশ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।

এদের মধ্যে তিনজনের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যারা এর আগে আক্রান্ত এক প্রবাসীর পরিবারের সদস্য। তাদের মধ্যে দুজন শিশুর বয়স দশ বছরের নিচে, অন্যজন নারী।

এর আগে দ্বিতীয় দফায় ইতালি ও জার্মানি ফেরত যে দুজনের মধ্যে ভাইরাস ধরা পড়েছিল, তাদেরই একজনের মাধ্যমে তার পরিবারের ওই তিন সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। অর্থাৎ ঐ ব্যক্তি বিদেশ থেকে আক্রান্ত হয়ে ফিরে নিজের পরিবারের সদস্যদেরও ক্ষতি করেছেন।

অন্যদিকে সর্বশেষ আক্রান্ত আরেকজন দেশেই ছিলেন, তবে তার বাড়িতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে একজন এসেছিলেন। ওই প্রবাসীর সংস্পর্শে এসেই আক্রান্ত হয়েছেন দেশে থাকা ওই ব্যক্তি। সেই প্রবাসীর শরীরে সামান্য জ্বর ছিলো, তবে তিনি রিপোর্ট করেননি। তিনি আবার যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গেছেন।

এ বিষয়গুলো দুঃখজনক। ওই ব্যক্তিগুলো যদি সতর্ক থাকতেন তাহলে এরকম ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটতো না। বিদেশ ফেরতদের কোয়ারেন্টাইনে থাকার ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা জারি করা হয়েছে। যে কেউ বিশ্বের যেকোনও দেশ থেকে বাংলাদেশে এলে তাকে অবশ্যই ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।

এজন্য ডিসি, টিএনও, উপজেলা চেয়ারম্যান, সিভিল সার্জন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের মেয়রদের এ বিষয়ে খোঁজ রাখতে বলা হয়েছে। বিদেশ ফেরতদের শনাক্ত করে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। কেউ যদি এই নির্দেশ অমান্য করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় জাতীয়, বিভাগীয়, সিটি করপোরেশন এলাকায়, পৌরসভা, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে কমিটি গঠিত হয়েছে। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিবর্গ ১৪ দিন ঘরের বাইরে বের হবেন না এবং নিজ বাড়ির নির্ধারিত একটি কক্ষে অবস্থান করবেন।

পরিবারের অন্যান্য সদস্য দেশে প্রত্যাগত সদস্যের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করবেন। সরকারের গঠিত কমিটিসমূহ সমপ্রতি বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের বাড়ি চিহ্নিত করবেন এবং তাদের গৃহে সার্বক্ষণিক অবস্থানের বিষয়ে তদারকি করবেন। তবে ব্যক্তি পর্যায়ের সতর্কতা ছাড়া এটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

ঘনবসতিপূর্ণ এই দেশে কে কোথায় কী করছে তা সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা সম্ভব নয়। কাজেই ভয়াবহতা শুরু হবার আগে এই ভাইরাস প্রতিরোধে এখনই জনসচেতনা বৃদ্ধি করা জরুরি প্রয়োজন। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় সারাবিশ্বে হোম কোয়ারেন্টাইন (নিজ গৃহে সার্বক্ষণিক অবস্থান) একমাত্র কার্যকর উপায় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

দেশে প্রত্যাগত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাধ্যমে বাংলাদেশে এই ভাইরাস সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। এমতাবস্থায়, বিদেশ প্রত্যাগত নাগরিকদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা অতীব জরুরি। যারা বিদেশ থেকে এসে পরিবারের সঙ্গে থাকছেন, তাদের পরিবারের সদস্যদেরই তাদেরকে আলাদা করে (হোম কোয়ারেন্টাইনে) রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

কমপক্ষে এক মিটার দূরত্ব বজায় রেখে তাদের মেলামেশা করতে হবে। যদি কেউ হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার বিষয়টি না মেনে অবাধ ঘোরাফেরা করেন, তবে তাদের বিরুদ্ধে সংক্রামক ব্যাধি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে।

ইতোমধ্যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়াও হয়েছে। কিন্তু সচেতনতা ছাড়া শুধু শাস্তি দিয়ে রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। তাই গুরুত্ব দিতে হবে সতর্কতায়। সবার অংশগ্রহণ ছাড়া করোনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

আমারসংবাদ/এআই