Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ১১ মে, ২০২৪,

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ অনুদান খাতে বরাদ্দ বাড়াবে সরকার

প্রিন্ট সংস্করণ॥বেলাল হোসেন

অক্টোবর ২০, ২০১৯, ১১:১৫ এএম


শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ অনুদান খাতে বরাদ্দ বাড়াবে সরকার

দুস্থ, অসহায়, অনগ্রসর সম্প্রদায়, প্রতিবন্ধী ও গরিব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়া এগিয়ে নেয়ার জন্য সরকারি আর্থিক অনুদান গত দুই বছর থেকে দিয়ে আসছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর পাশাপাশি অনগ্রসর এলাকার অসচ্ছল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিশেষ সহায়তা প্রদানে এ অনুদান দেয়া হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ করতে আর্থিক অনুদান ব্যবস্থা অনেকটা সহায়তা করছে। তাই এ খাতে অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে যাচ্ছে সরকার। এছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রীদের আর্থিক অনুদান প্রদানের নীতিমালায় বেশকিছু সংশোধন আনতে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের অনুদান প্রদানের জন্য অনুসরণীয় নীতিমালা-২০১৭ অনুযায়ী আবেদনকারীদের মধ্য থেকে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণির ৩৫ শতাংশ, ৯ম ও ১০ম শ্রেণির ৩৫ শতাংশ, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ২০ শতাংশ এবং স্নাতক ও তদূর্ধ্ব পর্যায়ের ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী এ অনুদান পেয়ে থাকে। সে অনুযায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চারটি ক্যাটাগরিতে শিক্ষার্থীদের এ অনুদানের টাকা দেয়া হয়েছে।

এদের মধ্যে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণির দুই হাজার ১০০ শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে মোট এক কোটি পাঁচ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। আর ৯ম থেকে ১০ম শ্রেণির দুই হাজার ১০০ শিক্ষার্থী বিশেষ অনুদানের এক কোটি পাঁচ লাখ টাকা পেয়েছেন। তারা প্রত্যেকে পাঁচ হাজার করে টাকা পাবেন।

এছাড়া একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির এক হাজার শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ছয় হাজার টাকা করে ৬০ লাখ টাকা, স্নাতক থেকে তদূর্ধ্ব শ্রেণির ৪২৮ জন শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে সাত হাজার করে ২৯ লাখ ৯৬ হাজার টাকা বিশেষ অনুদান দেয়া হয়েছে।

এছাড়া ২০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ২০০ শিক্ষককে বিশেষ অনুদানের টাকা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ডাক বিভাগের ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদের মাধ্যমে এ টাকা দেয়া হবে। শিক্ষক ক্যাটাগরিতে বেসরকারি সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকারা আবেদন করতে পারবে। শিক্ষকরা দুরারোগ্য ব্যাধি ও দুর্ঘটনার জন্য অনুদানের আবেদন করতে পারবেন।

এছাড়াও সরকারি বা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা এ অনুদানের জন্য আবেদন করতে পারবে। তারা দুরারোগ্য ব্যাধি, দুর্ঘটনা এবং শিক্ষাগ্রহণ কাজে ব্যয়ের জন্য অনুদানের আবেদন করতে পারবে। তবে এ বিশেষ অনুদানের ক্ষেত্রে দুস্থ, প্রতিবন্ধী, অসহায়, রোগাক্রান্ত, গরিব, মেধাবী ও অনগ্রসর সম্প্রদায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিশেষ অনুদান খাতে বরাদ্দ শুরুতে দুই কোটি টাকা থাকলেও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা বাড়িয়ে চার কোটি টাকা করা হয়। চলতি অর্থবছরে আরও দুই কোটি টাকা বাড়িয়ে ছয় কোটি টাকা অনুদান দেয়া হবে।

তবে অনুদানের মধ্যে শিক্ষার্থীদের চারটি ক্যাটাগরির মধ্যে স্নাতক ও তদূর্ধ্ব পর্যায়ে আবেদন পড়ে বেশি। কিন্তু নীতিমালা অনুযায়ী এই ক্যাটাগরিতে ১০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায় সেখানে অনেক আবেদনকারীই অনুদান পান না। সেটি বিবেচনায় নিয়ে স্নাতক থেকে তদূর্ধ্ব শ্রেণির জন্য বরাদ্দ বাড়াতে নীতিমালা সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আগামী ২৭ অক্টোবর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের অনুদান প্রদানের জন্য অনুসরণীয় নীতিমালা সংশোধন সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় অনুদানের জন্য স্নাতক ও তদূর্ধ্ব পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. বেলায়েত হোসেন তালুকদার (বিশ্ববিদ্যালয়-১) আমার সংবাদকে বলেন, আমরা মূলত গরিব, মেধাবী ও শিক্ষার্থীদের এ অনুদানের জন্য বাছাই করি। সরকার অর্থিক অনুদানের বরাদ্দ বাড়ানোর চেষ্টা করে এবং সেটি ধাপে ধাপে বাড়ছে।

তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের অনুদান নীতিমালায় অনার্স-মাস্টার্স লেভেলে পার্সেন্টেজ কিছুটা কম আছে। ফলে যে পরিমাণ আবেদন পরে তার মধ্য থেকে মাত্র ১০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে অনুদান দেয়া হয়। সেজন্য ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য যে অনুদান রয়েছে সেখান থেকে আমরা সমানুপাত করবো। কারণ প্রতি বছরই অনুদানের জন্য বরাদ্দ বাড়ছে। আমরা শুরুতে দুই কোটি বরাদ্দ পেয়েছিলাম। গত বছরও বরাদ্দ ছিল চার কোটি টাকা, এবার বরাদ্দ ছয় কোটি টাকা।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, বিশেষ অনুদানের মোট বাজেটের কত পার্সেন্ট কোন লেভেলে দেয়া হবে সেটি নিয়ে চলতি মাসে বৈঠক আছে সেখানে আলোচনা হবে। এতে শুধু পর্যায়ভিত্তিক শিক্ষার্থীদের যে সংখ্যাটি রয়েছে সেটি পুনর্বিন্যাস করা হবে।

যেভাবে মিলবে আর্থিক অনুদান
অনুদান প্রাপ্তির জন্য আগ্রহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রীগণকে নির্ধারিত সময় সীমার মধ্যে নিজ নিজ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবরে আবেদন দাখিল করতে হয়। পরে জেলা প্রশাসকরা তিনটি শ্রেণিতে প্রাপ্ত আবেদন নির্ধারিত কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক ক্যাটাগরি, প্রতিটি ক্ষেত্রে, সর্বোচ্চ পাঁচটি আবেদন এবং শিক্ষার্থী ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ ১৫টি আবেদন সুপারিশ সহকারে চূড়ান্ত বাছাইয়ের জন্য প্রেরণ করেন।

শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঁচটি, ৯ম ও ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঁচটি, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত তিনটি এবং স্নাতক ও তদূর্ধ্ব পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষেত্রে দুটিসহ মোট ১৫টি আবেদন সুপারিশসহ পাঠাতে পারেন। পরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রাপ্ত আবেদনগুলো বিভাগ কর্তৃক গঠিত কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে অনুদানপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, শিক্ষার্থীর তালিকা চূড়ান্ত করে সরকারের অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করেন।

বিশেষ অনুদান প্রাপ্তির যোগ্যতা ও শর্তে বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরিতে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত অথবা এমপিওভুক্ত বেসরকারি সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবেদন করতে পারবে। আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের মেরামত ও সংস্কার, আসবাবপত্র তৈরি, খেলাধুলার সরঞ্জাম, প্রতিষ্ঠানকে প্রতিবন্ধী-বান্ধব করাসহ পাঠাগারের উন্নয়ন কাজের জন্য অনুদান চাইতে পারবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অনগ্রসর এলাকার অসচ্ছল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিন্তু প্রতিষ্ঠানের লেখাপড়ার মান ভালো, সেসব প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। আর বরাদ্দ পাওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের বোর্ড অব গভর্নস ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ খরচ করতে হবে।

অর্থ প্রাপ্তির এক মাসের মধ্যে অর্থ বিতরণ ও খরচ করতে হবে। অর্থ ব্যয়ের ১৫ (পনের) দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ব্যয়ের প্রতিবেদন প্রেরণ নিশ্চিত করতে হবে।