Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪,

এক মাসের ব্যবধানে চার আ.লীগ নেতার বিদায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই ১০, ২০২০, ১০:১১ এএম


এক মাসের ব্যবধানে চার আ.লীগ নেতার বিদায়

এক মাসের (১৩ জুন থেকে আজ পর্যন্ত) ব্যবধানে শীর্ষ সারির চার নেতাকে হারিয়েছে বর্তমান ক্ষমতাসীন বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের মৃত্যু হয়।

এর আগে একে একে মোহাম্মদ নাসিম, শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ও বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের মৃত্যু হয়।

এক নজরে এই চার নেতা

মোহাম্মদ নাসিম:

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, ১৪ দলের মুখপাত্র ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম মৃত্যুবরণ করেন গত ১৩ জুন (শনিবার)। রাজধানী ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালে (বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন ।

এর আগে ৫ জুন থেকে কোমায় ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। ওইসময় করোনা উপসর্গ নিয়ে তিনি ১ জুন রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে তার করোনা টেস্ট করা হয়। ওইদিন রাতে তার করোনা পজিটিভ আসে।

করোনাভাইরাস আক্রান্ত হলেও পরদিন মোহাম্মদ নাসিমের অবস্থার উন্নতি হয়। ৫ জুন ভোরে তিনি আবার স্ট্রোক করেন। ওই দিনই তার অপারেশন করা হয়। পরদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।

অপারেশনের পর চিকিৎসকরা তাকে ৭২ ঘণ্টা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখেন। ওই সময় পার হওয়ার পরও তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় মেডিকেল বোর্ড নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। ওই বোর্ডের তত্ত্বাবধানেই তিনি কোমায় ছিলেন। এরমধ্যে ৯ জুন তার করোনা পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ আসে।

এদিকে মোহাম্মদ নাসিম স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী। ১৯৯৬ সালে স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

রাজনৈতিক জীবনে নাসিম ৬ বার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন।

ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে ষাটের দশকে ছাত্র রাজনীতির জীবন শুরু হলেও পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর সরাসরি প্রভাবে ছাত্রলীগে যোগদান করেন মোহাম্মদ নাসিম। ছাত্র অবস্থায় ১৯৬৬ সালে তিনি পাবনা অঞ্চলে ভুট্টা আন্দোলন সংগঠিত করলে বাবা মনসুর আলীর সঙ্গে কারারুদ্ধ হন।

এদিকে ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর নাসিম আওয়ামী লীগের পাবনা জেলা শাখার যুগ্মসচিব হন। ১৯৭৩ সালের পর তাকে বাংলাদেশ যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়। ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠনের পরে তাকে এর সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত করা হয়।

পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পর মোহাম্মদ নাসিমকেও গ্রেপ্তার করা হয়। সেসময় দীর্ঘদিন তাকে কারাগারে থাকতে হয়।

১৯৮১ সালের আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতি থেকে জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন নাসিম। ওই সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুব সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮২ সালে নাসিমকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালের সম্মেলনে দলের প্রচার সম্পাদক মনোনীত হন।

এদিকে ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালের সম্মেলনে নাসিম দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ২০০২ সালের আগ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ একটি ছিল। এরপর থেকে বিভাগভিত্তিক সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেয়া হয়।

২০০২ ও ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত দলের সম্মেলনে নাসিমকে কার্যনির্বাহী কমিটির এক নম্বর সদস্য পদে রাখা হয়। ২০১২ সালের সম্মেলনে তাকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। পরপর তিন মেয়াদে তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮৬ সালে মোহাম্মদ নাসিম প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। সিরাজগঞ্জ-১ সংসদীয় আসন (কাজীপুর) থেকে ৫বার বিজয়ী হন তিনি। ১৯৯১-এ তিনি জাতীয় সংসদে বিরোধীদলের চিফ হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯৬ সালে নাসিম স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তৎকালীন ১/১১ সরকারের দেয়া মামলার কারণে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। ওই নির্বাচনে তার ছেলে তানভীর শাকিল জয় দলীয় মনোনয়ন পান। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে নাসিম মনোনয়ন পান এবং আওয়ামী লীগ সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হন। ২০১৯ সালের নির্বাচনেও তিনি বিজয়ী হন।

মোহাম্মদ নাসিম পাবনার এডওয়ার্ড কলেজে পড়াশোনা করেন। তিনি ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন। ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা আন্দোলনের এক সমাবেশে অংশ নিতে পাবনায় যান এবং পরে তিনি মনসুর আলীর বাড়িতে যান। তিনি জানতে পারেন যে নাসিম ছাত্র ইউনিয়নের নেতা। এরপর শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠতায় নাসিম আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের একটি অনুষ্ঠানে হাজির হন এবং পরবর্তীকালে এই ছাত্র সংগঠনে যোগ দেন।

এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশের পর নাসিম ঢাকায় এসে জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন ও এখান থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

মোহাম্মদ নাসিমের জন্ম ১৯৪৮ সালের ২ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলায়। তার বাবা শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী এবং স্বাধীন বাংলাদেশের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী।

অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন:

বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। তার বয়স হয়েছিলো ৭৭ বছর। তিনি নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন।

গত ২ জুন জ্বর, অ্যালার্জিসহ বার্ধক্যজনিত নানা অসুস্থতায় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য সাহারা খাতুনকে। অবস্থার অবনতি হলে ১৯ জুন সকালে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়।

এরপর অবস্থার উন্নতি হলে ২২ জুন দুপুরে তাকে আইসিইউ থেকে এইচডিইউতে (হাইডিপেন্ডেন্সি ইউনিট) স্থানান্তর করা হয়। পরে ২৬ জুন সকালে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আবার তাকে ফের আইসিইউতে নেয়া হয়।

এরপর তার অধিকতর উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৬ জুলাই চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে থাইল্যান্ড নেয়া হয়। সেখানে বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ২৫ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

সাহারা খাতুনের জন্ম ১৯৪৩ সালের ১ মার্চ ঢাকার কুর্মিটোলা গ্রামে। তার বাবার নাম মরহুম আবদুল আজিজ ও মায়ের নাম তুরজান নেছা। সিদ্ধেশ্বরী গার্লস হাইস্কুল থেকে ১৯৬০ সালে ইস্ট-পাকিস্তান বোর্ডের অধীনে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন তিনি। এরপর সিটি নাইট কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন।

এরপর সাহারা খাতুন জগন্নাথ কলেজে বিএ কোর্সে ভর্তি হন। পরে করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী মাধ্যমে দ্বিতীয় শ্রেণিতে বিএ (ডিগ্রি) অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হলেও তিনি কোর্স শেষ করেননি। ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দ্বিতীয় শ্রেণিতে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন সাহারা খাতুন।

এদিকে ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্র রাজনীতিতে নাম লেখান সাহারা খাতুন। আইনপেশায় আসার পর সক্রিয়ভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬৭ সালে সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন সাহারা খাতুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের ছাত্রদের মধ্যে একটি নির্বাচনে তিনি ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন। সেটি ছিল তার জীবনের প্রথম নির্বাচন।

এরপর ১৯৬৯ সালে আওয়ামী লীগের মহিলা শাখা গঠিত হলে তাতে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ শুরু করেন এবং আইভি রহমানের নেতৃত্বে সারা ঢাকা শহরে মহিলাদের সংগঠিত করতে শুরু করেন। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের দিনেও তিনি সরাসরি উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন ১৯৭১ সালে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের সময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।

১৯৮১ সাল থেকে আইন পেশা শুরু করেন সাহারা খাতুন। প্রতিষ্ঠা করেন আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ। তিনি ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন ঢাকা-৫ আসনে প্রথমবার অংশ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে হেরে যান।

মঈনুদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেপ্তার করা হয় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তার সঙ্গে আবারও গ্রেপ্তার হন অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। তিনি ছিলেন কল্যাণমূলক রাজনীতির অগ্রদূত ও ব্যক্তিগতভাবে শেখ হাসিনার খুব প্রিয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সাহারা খাতুন নিজে রাজনৈতিক অপরাধে অভিযুক্ত হয়েছিলেন।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০০৮ এর নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-১৮ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিত হওয়ার পর মন্ত্রিসভা গঠনের সময় ডাক পড়ে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের। তিনি শপথগ্রহণ করেন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। তিনি ৬ জানুয়ারি ২০০৯ সালে তার দফতরে প্রবেশ করেন।

২০০৯ সালের অওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। এর আগে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন সদ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহ শুরু হলে তিনি দ্বন্দ্ব সমাধানে নেতৃত্ব করেন। বিদ্রোহীদের খারাপ দিকটার সুরাহা করেন। যেটা সৈনিকদের পক্ষে ও বাংলাদেশ রাইফেল অফিসারদের বিরুদ্ধে যায়। যারা বাংলাদেশের আধাসামরিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী। তিনি সেখানে বাংলাদেশ রাইফেলের ক্যাম্পাসের কাছে গিয়েছিলেন। তাদের মাঝে আপসের জন্য উদ্দীপনামূলক কথা বলেন এবং বিদ্রোহীদের অস্ত্র জমা দিতে বলেন।

২০১২ সালে মন্ত্রণালয়ের রদবদল ঘটলে তিনি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরে ঢাকা-১৮ আসন থেকে ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও তিনি জয়ী হন।

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তিনি প্রথমে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের মহিলা সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে মহিলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদক এবং একইসঙ্গে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সহ-আইন সম্পাদক, পরে আইন সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনি প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন।

এছাড়া স্বাধীনতার পরেই সাহারা খাতুন মহিলা সমিতির সদস্য মনোনীত হন। তখন ড. নীলিমা ইব্রাহিম সভানেত্রী ও আইভি রহমান সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া তিনি পরিবার পরিকল্পনা সমিতি, ঢাকা আইনজীবী সমিতি, গাজীপুর আইনজীবী সমিতি ও ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়শনেরও আজীবন সদস্য। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিরও সদস্য। তিনি আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যশানাল অ্যালাইন্স অব ওমেন্সের ডিরেক্টর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

শেখ মো. আবদুল্লাহ:

ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ১৩ জুন রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন শেখ মো. আবদুল্লাহ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনিও করোনা পজেটিভ ছিলেন।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মো. আবদুল্লাহ ১৯৪৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার মধুমতী নদীর তীরবর্তী কেকানিয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত ধার্মিক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম শেখ মো. মতিউর রহমান এবং মাতা মরহুমা মোসাম্মৎ রাবেয়া খাতুন। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় ছিলেন।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফ্রন্ট মুজিব বাহিনীর সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হলে তিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

শেখ আবদুল্লাহ ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি জাতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

আবদুল্লাহ কর্মজীবনের শুরুতে সুলতানশাহী কেকানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরে গোপালগঞ্জ ও ঢাকা জজকোর্টে ওকালতি পেশায় জড়িত হন। প্রথমে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের বোর্ড অব গভর্নরসর সদস্য ও পরবর্তীকালে ওই বোর্ডের চেয়ারম্যান হন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক ছিলেন তিনি।

১৯৪৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার কেকানিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শেখ মো. আবদুল্লাহ। আযম খান সরকারি কমার্স কলেজের ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলনে অংশ নেন এবং সেসময় যুবলীগে যোগ দিয়ে গোপালগঞ্জ জেলা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান।

শেখ আবদুল্লাহ ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৭০ সালের সাধরণ নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। মুজিব বাহিনীতে যোগ দিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। স্বাধীনতার পর তিনি গোপালগঞ্জ জেলা শাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

বদরউদ্দিন আহমদ কামরান:

ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৫ জুন সোমবার ভোররাত তিনটায় মারা যান সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।

৫ জুন সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে কামরানের নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়। পরদিন তীব্র জ্বর ও বমির জন্য নগরীর শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ৭ জুন তাকে ঢাকায় এনে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। ৮ জুন তাকে প্লাজমা থেরাপি দেয়া হয়।

এদিকে প্লাজমা থেরাপির পর কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠেন কামরান। তবে তাকে সেখানে আইসিইউতে রেখে অক্সিজেন সাপোর্টে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় এবং তিনি মারা যান।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র কামরান সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন দীর্ঘদিন।

সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ১৯৫১ সালের ১ জানুয়ারি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় ১৯৭৩ সালে তিনি প্রথমবার সিলেট পৌরসভার ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচিত হন। ১৯৯৫ সালে সিলেট পৌরসভার চেয়ারম্যান হন।

২০০২ সালে সিলেট পৌরসভা সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর কামরান প্রথম মেয়র মনোনীত হন। ২০০৩ সালে সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে জিতে মেয়র পদ ধরে রাখেন তিনি।

এদিকে ২০০৭-০৮ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আরও অনেক রাজনীতিবিদের মত কামরানকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সে সময় জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা কামরান কারাগারে থেকে নির্বাচন করেও বিপুল ভোটে জয়ী হন।

সবশেষ ২০১৩ সালের নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে হেরে গিয়ে মেয়র পদ হারান কামরান। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি লড়েছিলেন, কিন্তু জয়ী হতে পারেননি।

১৯৮৯ সাল থেকে সিলেট শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ২০০২ সালে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হন কামরান। সেই দায়িত্ব তিনি সামলেছেন প্রায় দেড় যুগ।

কামরান মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেও চষে বেড়িয়েছেন সমগ্র সিলেট বিভাগজুড়ে। কোথাও দলীয় অনুষ্ঠান হলে মিলেছে তার দেখা।

কামরান ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পদ পান। মৃত্যুর আগেও একই পদে ছিলেন তিনি।

আমারসংবাদ/জেডআই